শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১১

দেশের একমাত্র কুমির খামারটি মালিকানা দ্বন্দ্বে ধ্বংসের মুখে


দেশের একমাত্র কুমির খামারটি মালিকানা দ্বন্দ্বে ধ্বংসের মুখে
undefined
ময়মনসিংহে দেশের একমাত্র কুমির খামার _করতোয়া
 নজীব আশরাফ, ময়মনসিংহ থেকে :
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং দেশের একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে কুমির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের খামারটি মালিকানা দ্বন্দ্বে ধ্বংস হতে বসেছে। কারিগরিভাবে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি এখন এই ফার্মের সাথে সরাসরি যুক্ত নেই। কুমিরগুলোকে ৩টি নার্সারিতে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। খাবার ও তাপ নিয়ন্ত্রণের অভাবে গত এক মাসে মারা গেছে শতাধিক কুমির। মৃত্যুর প্রহর গুণছে আরও প্রায় এক হাজার কুমির। দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে কয়েকশ' কোটি টাকার কুমির রফতানিও বন্ধ। কুমির খামারের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক বাংলাদেশ ব্যাংক হলেও নিয়মিত তদারকি ও মনিটরিং করা হচ্ছে না। সমপ্রতি ব্যাংকের এক তদন্তে ব্যবস্থাপনা ত্রুটি থাকায় খামারটি ধ্বংসের প্রমাণ মিলেছে। খামারটির চারপাশের বেড়া ভেঙে গেছে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা কর্মীও নেই। এহেন অবস্থায় যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডেটের খামারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ, মেজবাউল হকের ৩৬ শতাংশ এবং মুশতাক আহম্মেদের ১৫ শতাংশ শেয়ার আছে। বর্তমানে খামারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুটি দায়িত্ব পালন করছেন মেজবাউল হক। আর পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মুশতাক আহম্মেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পৃথিশ কুমার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল বিনিয়োগে ২০০৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৪ একর জমিতে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির খামার গড়ে তোলে। শুরুতে মাত্র
৭৫টি কুমির দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও খামারের কুমিরের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯০০ কুমির রয়েছে সেখানে। ২০১০ সালে জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৭টি কুমির বিক্রির মধ্যদিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে কুমির রফতানির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রথমবারের মতো নাম লেখায় বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক ক্রকোডাইল স্পেশালিস্ট গ্রুপের সদস্য খামারের পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ এ ব্যাপারে বলেন, তার অভিজ্ঞতা ও মেধা দিয়ে তিলে তিলে এ খামারটি গড়ে তোলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আর কুমির পালন অভিজ্ঞতাহীন খামারের চেয়ারম্যান মেজবাউল হকের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণেই ধ্বংস হতে যাচ্ছে কুমির খামারটি। তাকে বিনা কারণে, কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই ভারপ্রাপ্ত এমডির পদ ব্যবহার করছেন। পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে তার মালিকানার অংশও কিনে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই মুশতাক আহম্মেদের সময় খামারে নিয়োগ পাওয়া সব বিশেষজ্ঞ, শ্রমিকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন চেয়ারম্যান। ফলে সুষ্ঠুভাবে খামারে কুমিরের খাদ্য ও পরিচর্যার অভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্য হিসেবে কুমিরকে মাছ ও মাংস দিতে হয়। ঠা া থেকে রক্ষার জন্য পানিতে দিতে হয় ইলেকট্রিক তাপ। সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে গত এক মাসে একশ'র বেশি কুমির মারা গেছে বলে অভিযোগ তার। এমনকি চেয়ারম্যান একক ক্ষমতাবলে গত ছয় মাস ধরে খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন না। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান খামারের প্রবেশপথের মূল অংশের জমি তার স্ত্রী মাহফুজা হক লুলুর নামে রেজিস্ট্রি করেছেন। দুই মালিকের দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না।
উভয় পরিচালকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার খামারটি পরিদর্শন করে নানা অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে সম্ভাবনাময় এ খামারটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মেজবাউল হক বলেন, পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ তার বোনের ছেলে। দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, খামারটি বড় করার স্বার্থে অন্য বিনিয়োগকারী আনার প্রস্তাব করা হলে তিনি নিজেও কোন অর্থ দিচ্ছেন না, আবার অন্য বিনিয়োগকারীও নিতে দিচ্ছেন না। বর্তমানে কোন কুমির মারা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। উল্টো মুশতাক আহম্মেদের সময় কুমির মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মুশতাক আহম্মেদকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। খামারটি ভালোভাবে চলছে দাবি করে তিনি বলেন, খুব শিগগিরই কুমির বিক্রি হবে। সপ্তাহে একবার তিনি নিজে খামার দেখাশোনা করেন বলেও জানান।http://www.karatoa.com.bd/details.php?news=&val=59343&pub_no=517&menu_id=2

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন