সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১১

মালিকানা দ্বন্দ্বে মারা যাচ্ছে কুমির


মালিকানা দ্বন্দ্বে মারা যাচ্ছে কুমির
shomokal 21st March 2011
আলতাব হোসেন
মালিকানার দ্বন্দ্বে ধ্বংস হতে বসেছে দেশের প্রথম ও একমাত্র বাণিজ্যিক কুমির চাষ প্রকল্প। খাবার ও তাপনিয়ন্ত্রণের অভাবে গত এক মাসে মারা গেছে শতাধিক কুমির। মৃত্যুর প্রহর গুনছে আরও এক হাজারের বেশি কুমির। দ্বন্দ্বের কারণে কয়েক শ' কোটি টাকার কুমির রফতানির প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে। খামারের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও ব্যবস্থাপনার অভাবে খামারটি ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
খামারের পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, খামারটির চেয়ারম্যান মেজবাউল হকের একক সিদ্ধান্তের কারণে ধ্বংস হতে যাচ্ছে কুমির খামারটি। লাভজনক হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান খামারটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তার। এ জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তার মালিকানার অংশ কিনে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ জন্য তাকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে; কিন্তু তার অংশ বিক্রি না করায় মুশতাক আহম্মেদের সময়ে খামারে নিয়োগ পাওয়া সব বিশেষজ্ঞ, শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করেছেন চেয়ারম্যান। ফলে খামারে কুমিরের খাদ্য ও পরিচর্যার অভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্য হিসেবে কুমিরকে মাছ ও মাংস দিতে হয়। ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য পানিতে দিতে হয় ইলেকট্রিক তাপ। কর্মচারীর অভাবে এসব করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ মুশতাক আহম্মেদের। এ জন্য গত এক মাসে একশ'র বেশি কুমির মারা গেছে বলে অভিযোগ তার। এমনকি চেয়ারম্যান একক ক্ষমতাবলে গত ছয় মাস ধরে খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব ব্যাংকের মাধ্যমে করছেন না। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান খামারের প্রবেশপথের মূল
অংশের জমি তার স্ত্রী মাহফুজা হক লুলুর নামে রেজিস্ট্রি করেছেন।
দুই মালিকের দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। উভয় পরিচালকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার খামারটি পরিদর্শন করে নানা অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে সম্ভাবনাময় এ খামারটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মেজবাউল হক সমকালকে বলেন, পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ তার বোনের ছেলে। দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, খামারটি বড় করার স্বার্থে অন্য বিনিয়োগকারী আনার প্রস্তাব করা হলে তিনি নিজেও কোনো অর্থ দিচ্ছেন না, আবার অন্য বিনিয়োগকারী নিচ্ছেন না। বর্তমানে কোনো কুমির মারা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। উল্টো মুশতাক আহম্মেদের সময় কুমির মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মুশতাক আহম্মদকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। খামারটি ভালোভাবে চলছে দাবি করে তিনি বলেন, খুব শিগগির কুমির বিক্রি হবে। সপ্তাহে একবার তিনি নিজে খামার দেখাশোনা করেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, খামারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ, মেজবাউল হকের ৩৬ শতাংশ এবং মুশতাক আহম্মেদের ১৫ শতাংশ শেয়ার আছে। বর্তমানে খামারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন মেজবাউল হক। আর পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মুশতাক আহম্মেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পৃথিশ কুমার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল বিনিয়োগে ২০০৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৪ একর জমিতে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির খামার গড়ে তোলে। শুরুতে মাত্র ৭৫টি কুমির দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও খামারের কুমিরের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বর্তমান প্রায় ৯০০ কুমির রয়েছে সেখানে। ২০১০ সালে জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৭টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে কুমির রফতানির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রথমবারের মতো নাম লেখায় বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন